বদলি জনিত বিদায় বক্তব্য | সহকর্মীর/ কর্মকর্তার বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য

আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকম ভাবে বক্তব্য দিতে হয়। তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য হলো একজন সহকর্মীর/ কর্মকর্তার বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য রাখা। তো আজকে আলোচনা করা হবে কিভাবে আপনি বদলি জনিত বিদায় বক্তব্য দিবেন। একই ভাবে এই ভাষণ আপনি অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা, বিদায়ী বক্তব্য হিসেবে ও ব্যবহার করতে পারবেন। 

আমাদের অফিসে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মকর্তা বদলী হয়ে যায়। যখন একজন অফিসের কর্মকর্তা বদলি হয় তখন কিন্তু একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে অবশ্যই আপনার সহকর্মীর বিদায়ী উপলক্ষে একটি বক্তব্য প্রদান করতে হয়। এমন অনেক মানুষ আছে যারা কিভাবে এই বক্তব্য শুরু করতে হয় তা জানে না। তাদের জন্য আজকের আর্টিকেল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারণ আজকে আমাদের বক্তব্যের নমুনা পত্র আপনি যদি খুব ভালোভাবে অনুসরণ করেন। তাহলে যে কোন অফিসে বদলী উপলক্ষে বিদায়ী বক্তব্য দিতে পারবেন। চলুন একজন কর্মকতার বদলী হওয়ার কারণে বিদায়ী বক্তব্যের নমুনা পত্র দেখে নেই। 

আলোচনার বিষয় সমূহঃ

 বদলি জনিত বিদায় বক্তব্য

 প্রকৃতপক্ষে যে কোন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া সম্পূর্ণ নিজের উপর নির্ভর করে। কারণ পরিস্থিতি সাপেক্ষে আপনাকে বক্তব্য দিতে হবে। আজকে যেহেতু একজন কর্মকর্তার বদলি হওয়ার কারণে অনুষ্ঠান হচ্ছে। তাই বিদায়ী একটি বক্তব্যের নমুনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। আপনি ইচ্ছে করলে এর থেকেও ভালো ভাবে বক্তব্য প্রদান করতে পারেন। 

“বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আজকের অনুষ্ঠানের উপস্থিত আছেন আমাদের কোম্পানির এমডি সাহেব, আরো উপস্থিত আছেন অত্র কোম্পানির সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। সকলের প্রতি রইল আমার আন্তরিক সালাম আসসালামু আলাইকুম। অন্যান্য জাতির প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আপনারা সবাই অবগত আছেন যে আমাদের সাথে দীর্ঘদিন কর্মরত মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ ভাইয়ের বদলী হওয়া উপলক্ষে আজকের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। 

Read More :   সংবিধানের সংশোধনী মনে রাখার কৌশল | ছন্দে ছন্দে সংবিধান pdf সহ

বিদায় নিতে মন চায়না, তবুও বরণ করে নিতে হয় বিদায় নামক শব্দটিকে। বিদায়ের হাত ধরেই আপনার জীবনে নতুন কিছুর যাত্রা শুরু হোক।

দীর্ঘদিন যাবত মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ভাই আমাদের কোম্পানিতে সততার সঙ্গে কাজ করে এসেছে। আপনারা সবাই অবগত আছেন, আমাদের সবার সরকারি চাকরি এক জায়গায় করা হয় না। উদ্ধাতন কর্মকর্তার নির্দেশে আমাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বদলি হতে হয়। ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের মাঝখানে থেকে মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ ভাই চলে যাচ্ছেন। 

 আসলে আজকে বক্তব্য দেবার মত কিছুই নেই। আপনারা সবাই মোঃ ইমতিয়াজ আলী ভাইয়ের আচার ব্যবহার ও সততা রেখেছেন। তিনি সবসময় আমাদের প্রতিষ্ঠানের ভালো করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানে আজ এতো সফলতা অর্জন করার পিছনে তার ভূমিকা অপরিসীম। যা না বললেই নয়। বিশেষ করে আমাদের প্রতিষ্ঠান যখন করোনা মহামারীর সময়ে একদম ভেঙে পড়েছিল। তখন তিনি কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কাজে কখনো পিছিয়ে পড়েন নি। 

আমাদের মধ্যে এমন অনেক কর্মকর্তা ছিলেন, যারা করোনা মহামারীর সময়ে ঠিকমতো অফিসে আসেননি বা আসার চেষ্টা করেননি। কিন্তু সেই সময় মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আলী ভাই নিয়মিত অফিসে এসে এই পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের প্রতিষ্ঠানের ভালো জন্য কাজ করেছেন। যা অন্যান্য সকল কর্মকর্তার মাঝে এমন দৃষ্টান্ত ছিল না। যে দৃষ্টান্তগুলো শুধু তার মধ্যেই আমরা পেয়েছি। 

যদিও তিনি আমার সহকর্মী ছিলেন। কিন্তু সব সময় আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো সকল কাজে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন। আমার এখনো মনে পড়ে, যখন প্রথম আমি এই অফিসে জয়েন করি তখন আমার অফিসে কাজের বিষয়ে সঠিক ধারণা ছিল না। তখন তিনি আমাকে সব সময় কাজে সহযোগিতা করতেন। যখন নতুন একজন কর্মকর্তা আসলে অন্যান্য সকল কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের আদেশ করেন। কিন্তু মোঃ ইমতিয়াজ আলী ভাই ছিলেন এর বিপরীতে। নতুন অবস্থায় আমাকে সব সময় অনেক কাজে সহায়তা করেছেন। 

Read More :   কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এর কাজ কি

শুধু অফিসের কাজেই নয় পারিবারিক ও অন্যান্য সকল সমস্যার সমাধান খুব সহজেই তার কাছে পেয়ে যেতাম। একবার আমি পারিবারিক আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমার টাকার খুব প্রয়োজন ছিল। আমি আমার বন্ধুবান্ধব ও নিকট আত্মীয়দের কাছে টাকা ধার নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোথাও টাকা ধার পাইনি। সর্বশেষ আমি যখন ইমতিয়াজ আহমেদ ভাইকে টাকা ধারের কথা বলি। তখন খুব সহজে সে আমাকে টাকা ধার দেয়। তার টাকা পরিশোধ করতে আমরা এক মাসে দেরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি একটা কথাও আমাকে বলেননি। এটা থেকে বোঝা যায় তিনি অনেক বড় মনের একজন মানুষ ছিলেন। 

সততার দিক থেকে ইমতিয়াজ আহমেদ ভাই অনেক এগিয়ে ছিলেন। তিনি সর্বদা সবসময় সত্য কথা বলতেন। যা থেকে আমাদের সকল সহকর্মীর মধ্যে সততা ভাব চলে এসেছিল। তার কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন শিক্ষা অর্জন করেছি। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ধর্মীয় শিক্ষা। অফিসে যখনই আমরা সবাই অবসর সময় পেতাম। তখন ইমতিয়াজ ভাই আমাদের মধ্যে ধর্মীয় আলোচনা শুরু করত। 

প্রথম পর্যায়ে আমার ধর্মীয় আলোচনা শুনতে খুবই খারাপ লাগতো। পরবর্তীতে এক সপ্তাহ ধর্মীয় আলোচনাগুলো শোনার পর আমি তার মর্ম বুঝতে পারি। তারপর থেকে নিয়মিত তার ধর্মীয় আলোচনাগুলো শুনে আমল করার চেষ্টা করি। বিশেষ করে তার আলোচনা গুলো শোনার আগে আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম না। কিন্তু যখনই তার ধর্মীয় আলোচনা গুলো আমার জীবনে প্রতিফলিত হতে শুরু করে। তখন থেকেই মূলত আমি ধর্মীয় বিষয়কে খুবই গুরুত্বের সহকারে দেখতে থাকি। আমার ধর্মীয় শিক্ষা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সম্পূর্ণ কৃতিত্ব মহান আল্লাহতালা পর, সব থেকে বেশি কৃতিত্ব মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ ভাইয়ের। যা আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। 

আমার মত এমন অনেক সহকর্মী রয়েছে তার যারা তার থেকে অনেক শিক্ষা অর্জন করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সফলতা অর্জন করেছে। মোটকথা মোঃ ইমতিয়াজ আলী ভাই ছিলেন অত্যন্ত ভালো ও মহৎ ব্যক্তিত্বের একজন মানুষ। যার তুলনা দেওয়ার মত না। তিনি ছিলেন অতোলনীয় একজন ব্যক্তিত্ব। আমি সব সময় তার সকল কাজে অনুসরণ করার চেষ্টা করতাম। শুধু আমি নয় আমাদের অফিসের প্রায় অধিকাংশ সহকর্মীরা তাকে অনুসরণ করে। 

Read More :   ডিম আগে না মুরগি আগে ইসলাম কি বলে (ভিডিও সহ)

না চাইলেও দিতে হবে বিদায়, কিন্তু আছেন আপনি সবার হৃদয় জুড়ে। আপনার ভালোবাসা, স্নেহ কেউ কখনো ভুলবে না স্যার, শুভ বিদায়!

সত্যি কথা বলতে আমার মন তাকে কখনোই বিদায় দিতে চাচ্ছে না। শুধুমাত্র সরকারের নির্দেশনা বলেই আজকে আমাদের সবাইকে তাকে বিদায় জানাতে হবে। আমাদের অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আপনার সাথে যেহেতু দীর্ঘ সময় পার করেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন রকমের ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকবে। তাই আপনার নিকট সকলের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত সকল ভুলের আপনি মন থেকে ক্ষমা করে দিবেন। এর পাশাপাশি আমরা যেন আপনার মত মহৎ একজন ব্যক্তিত্ব হতে পারে তার জন্য দোয়া করবেন। 

আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য আর বাড়াতে চাচ্ছি না। আমার বক্তব্যের মধ্যে যদি কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। মোঃ ইমতিয়াজ আলী স্যার আপনি যেখানেই থাকেন সর্বদা ভালো থাকবেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বদা দোয়া করবেন। সবাইকে আসসালামু আলাইকুম। 

বদলি জনিত বিদায় বক্তব্য
বদলি জনিত বিদায় বক্তব্য

উপসংহার

এই ছিল আজকে একজন কর্মকতার বদলী হওয়ার কারণে বিদায়ী বক্তব্য/ সংবর্ধনা সম্পর্কে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি ও প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী বিদায়ী বক্তব্য দিতে হয়। উপরের বক্তব্যটি শুধুমাত্র একটি নমুনা পত্র। আপনি ইচ্ছা করলে এর থেকেও সুন্দরভাবে বক্তব্য প্রদান করতে পারেন। আমরা শুধু আপনাদের একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিভাবে বিদায়ী বক্তব্য দিতে হবে। তো আজকের আর্টিকেল আপনাদের কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এরকম আরো নতুন নতুন বিভিন্ন ধরনের আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন।