বর্তমান সময়ে কোয়েল পাখির ডিমের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান সময়ে ছোট থেকে শুরু করে প্রায় সকল বয়সের মানুষ কোয়েল পাখির ডিম খুবই পছন্দ করে। শুধু কোয়েল পাখির ডিম না তারা বাড়িতে কোয়েল পাখির লালন পালন করতে ভালোবাসে। তবে আপনাকে আগে অবশ্যই কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক গুলো জেনে নিতে হবে। চলুন তবে আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা, কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম, শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা, কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে, গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা, কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ ইত্যাদি।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে খাবার হিসেবে কোয়েল পাখির ডিম খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে কোয়েল পাখির বিভিন্ন খামার। কোয়েল পাখির ডিম তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট। এর গড় ওজন প্রায় ৯ গ্রাম। আকার ও ওজন ছোট বলে আপনি কোয়েল পাখির ডিমকে তুচ্ছ করতে পারেন না।
কারণ ডিমের থাকা সবগুলো পুষ্টি উপাদান হয়েছে কোয়েল পাখির ডিম। যার কারণে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের অবশ্যই প্রতিদিন কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া অনেক বেশি জরুরী। কারণ কোয়েল পাখির ডিমে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আপনি অন্যান্য ডিমে পাবেন না। এর পাশাপাশি কোয়েল পাখির ডিমের দাম অনেক কম। চলুন কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটায়
কোয়েল পাখির ডিম প্রায় সকল বয়সের মানুষ খেতে পারবে। তবে শিশুদের কোয়েল পাখির ডিম অনেক বেশি পছন্দের ও উপকারী। একজন শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটানোর জন্য তাকে নিয়মিত দুই থেকে তিনটি কোয়েল পাখির ডিম খেতে হবে। বর্তমান সময়ে দেখা যায় একজন শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটানোর জন্য আমরা বিভিন্ন রকমের ঔষধ দিয়ে থাকি।
যা একজন শিশুর জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এ কারণে আমাদের সবাইকে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটানোর ঔষধের পরিবর্তন যদি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ান। তাহলে শিশুর শরীরে কোন ক্ষতি হবে না বড় তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ও দ্রুত ঘটবে। এই জন্য আমরা আমাদের শিশুদের প্রতিদিন ২ থেকে তিনটি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়াবো। তাহলে তার শারীরিক মানসিক দুই ভাবেই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।
শরীর সুস্থ রাখে
একটা গবেষণায় দেখা গেছে আপনি যদি এ নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খান। তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরে যখনই রোদ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তখন কিন্তু আপনার শরীর সব সময় সুস্থ থাকবে। ঠিক তেমনিভাবে নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে শরীর সুস্থ থাকবে।
এছাড়াও চাইনিজরা কোয়েল পাখির ডিমকে অন্য সকল রোগের নিরাময় হিসেবেও ব্যবহার করে। যেমন: ডায়াবেটিস, টিবি ও অ্যাজমা ইত্যাদি। কোয়েল পাখির ডিমের মাধ্যমে কিডনি,লিভার সুস্থ থাকে অনেক সময় পিত্তথলিতে যে পাথর হয় তা গলাতেও সাহায্য করে এই পাখির ডিম।
ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে
অন্যান্য ডিমের মতোই কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে অনেক ধরনের ভিটামিন। কোয়েল পাখির ডিমে ভিটামিন বি-১ এর পরিমান মুরগীর ডিম থেকে ছয়গুণ বেশী, আয়রন ও ফসফরাস পাঁচ গুণ বেশী, ভিটামিন বি-২ পনেরো গুণ বেশী। অর্থাৎ দেখা গেল একটি মুরগির ডিমের তুলনায় কোয়েল পাখির ডিমে ছয়গুনের বেশি ভিটামিন রয়েছে।
এ কারণে আপনি ভিটামিন খাওয়ার পরিবর্তে যদি নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। তাহলে দেখা যাবে ভিটামিন খাওয়ার চেয়েও বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে কোয়েল পাখির ডিম। তাই আমরা কখনো ভিটামিন ওষুধ গ্রহণ করবো না। কারণ ভিটামিন ওষুধ আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে কিন্তু কোয়েল পাখির ডিমের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই শরীরে ভিটামিন যোগান দিতে বা ভিটামিনের ঘাটতিপূর্ণ করতে অবশ্যই কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খাবেন।
কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে
কোয়েল পাখির ডিমের রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম ও এমাইনো এসিড এমনভাবে বিন্যাসিত যে এই ডিম শরীরের সব ধরণের পুষ্টির অভাব পুরণ করে শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যারা কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। তাদের জন্য কোয়েল পাখির ডিম অনেক বেশি উপকারী। নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে আপনার কর্মদক্ষতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
এলার্জি প্রতিরোধ করে
আমাদের কম বেশি সবার সারা বছর জ্বর, সর্দি, এলার্জি সমস্যা লেগেই থাকে। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ার পরেও এ সমস্যা দূর হয় না। কিন্তু আপনি কি জানেন এলার্জি প্রতিরোধ করতে কোয়েল পাখির ডিম অনেক সাহায্য করে। কারণ এই ডিমে রয়েছে এলার্জির প্রতিরোধক উপাদান। তাই যাদের এলার্জি জনিত সর্দি বা ঠান্ডা রয়েছে, তারা নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাবেন।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারি
অন্যাম্য সব অঙ্গের থেকেও আমাদের ত্বক ও চুল যত্ন বেশি নেয়া হয়। বিশেষ করে ছেলেমেয়েরা উভয়েই কিশোর বয়সে তাকে খুবই যত্ন নেয়। কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ভিটামিন বি যা চোখের দৃষ্টশক্তি রক্ষার সাথে সাথে লোহিত রক্ত কণিকাও উৎপাদন করে যা আমাদের ত্বক, চুলের জন্যে খুবই উপকারি হিসেবে কাজ করে।
রক্ত স্বল্পতা দূর করে
কোয়েল পাখির ডিম আমাদের শরীরে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে ও দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এই ডিমে উপস্থিত অ্যামিনো এসিড নতুন নতুন টিস্যু তৈরি করে,টিস্যুর ক্ষয়রোধ করে, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখে, আয়রনের পভাব পূরন হয় ফলে রক্ত স্বল্পতা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এই কারণে যারা রক্ত শূন্যতায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত তিনটি করে কোয়েল পাখি ডিম খেতে পারেন। তাহলে আপনার দেহের রক্তস্বল্পতা পূরণ হয়ে যাবে।
অ্যান্টিবডি তৈরী
কোয়েল পাখি ডিম নিয়মিত খেলে শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। যখনই আপনার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। তখন কিন্তু দেহে রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। তাই আপনাকে পরিমাণ মতো নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেতে হবে। তাহলে আপনার দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে থাকবে।
দেহকে পরিষ্কার রাখে
পরিবেশ ময়লা হলে আমরা যেমন পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করি। ঠিক তেমনিভাবে আমাদের দেহের অভ্যন্তরে ময়লা জমা হয়। দেহের এই ময়লাকে পরিষ্কার করার জন্য কোয়েল পাখির ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোয়েল পাখির ডিম এইস ব আবর্জনাকে রক্তপ্রবাহ থেকে মূত্রের মাধ্যমে দূরীকরণে সহায়তা করে ও আমাদের দেহকে পরিষ্কার রাখে।

কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক
কোয়েল পাখির ডিমের যেমন উপকারিত রয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে এর ক্ষতিকর কিছু দিক রয়েছে। চলুন কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর কিছু দিক দেখে নেই।
ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের সমস্যার কারণ
যারা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ আছে তাদের যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে হয়,তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কোয়েলের ডিম এডিয়ে চলা উচিত। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট আছে। এই ফ্যাট ডায়াবেটিকস ও হৃদরোগীদের সমস্যার কারণ হতে পারে।
কোলেস্টেরল এর সমস্যা বাড়ায়
কোয়েল পাখির ১০০গ্রাম ডিমে থাকে ৮৪৪ গ্রাম কোলেস্টেরল। যা অন্যান্য ডিম থেকে বেশি। তাই যাদের কোলেস্টেরল এর সমস্যা বেশি তাদের উচিত এই ডিম অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করা।
পরিশেষে কিছু কথা
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়েছেন। কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিকের চেয়ে উপকারিতা অনেক বেশি। তবে আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রতিদিন কোয়েল পাখির ডিম খেতে হবে। দেহের পুষ্টি গুনাগুন ও রক্তস্বল্পতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোয়েল পাখির ডিমের কোন বিকল্প নেই। এছাড়া শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ দ্রুত ঘটতে কোয়েল পাখির ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করুন।